হিংসা: পরিচয় ও পরিণতি

প্রশ্ন: হিংসা কাকে বলে? হিংসার পরিণতি কি? একটা হাদিস আছে যে, ”হিংসা নেক আমল ধ্বংস করে দেয়।” এ হাদিসটা কি সহীহ?

উত্তর:

 হিংসা কাকে বলে এবং হিংসার পরিণতি কি?

🔰 হিংসা (حسد) বলা হয়: কারো কল্যাণ দেখে অন্তরে জ্বালা অনুভব করা এবং তার ক্ষতি করার জন্য চেষ্টা করা।

ইসলামের দৃষ্টিতে এটি গুনাহের কাজ ও নিন্দনীয় বিষয়।
✪ আল্লাহ তাআলা বলেন:
ﺃَﻡْ ﻳَﺤْﺴُﺪُﻭﻥَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﻋَﻠَﻰٰ ﻣَﺎ ﺁﺗَﺎﻫُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣِﻦْ ﻓَﻀْﻠِﻪِ
“নাকি আল্লাহ দয়া করে মানুষদেরকে যা দান করেছেন সে বিষয়ে এরা কি তাদেরকে হিংসা করে।” (সূরা নিসা: ৫৪)
✪ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
لَا تَحَاسَدُوا، وَلَا تَنَاجَشُوا، وَلَا تَبَاغَضُوا، وَلَا تَدَابَرُوا، وَلَا يَبِعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَيْعِ بَعْضٍ، وَكُونُوا عِبَادَ اللَّهِ إخْوَانًا، الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ، لَا يَظْلِمُهُ، وَلَا يَخْذُلُهُ، وَلَا يَكْذِبُهُ، وَلَا يَحْقِرُهُ، التَّقْوَى هَاهُنَا، وَيُشِيرُ إلَى صَدْرِهِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، بِحَسْبِ امْرِئٍ مِنْ الشَّرِّ أَنْ يَحْقِرَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ، كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ: دَمُهُ وَمَالُهُ وَعِرْضُهُ” .
رَوَاهُ مُسْلِمٌ [رقم:2564].
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“তোমরা পরস্পর হিংসা করো না।
– একে অপরের জন্য নিলাম ডেকে দাম বাড়াবে না।
– পরস্পর বিদ্বেষ পোষণ করো না।
– একে অপর থেকে আলাদা হয়ে যেও না বা সম্পর্ক চ্ছেদ করো না।
– একজনের ক্রয়ের উপর অন্যজন ক্রয় করো না।

– হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাও।

– মুসলিম মুসলিমের ভাই,
– সে তার উপর জুলুম করে না
– তাকে সহায়-সঙ্গী হীনভাবে ছেড়ে দেয় না।
– সে তার কাছে মিথ্যা বলে না
– ও তাকে অপমান করে না।
– তাকওয়া হচ্ছে- এখানে- তিনি নিজের বুকের দিকে তিনবার ইশারা করেন।
– কোন মানুষের জন্য এতটুকু মন্দ যথেষ্ট যে, সে আপন মুসলিম ভাইকে নীচ ও হীন মনে করে।
– এক মুসলিমের রক্ত, সম্পদ ও মান-সম্মান অন্য মুসলিমের জন্য হারাম।”
[মুসলিম: ২৫৬৪]

প্রকৃতপক্ষে হিংসা অত্যন্ত নিচু মানসিকতার পরিচায়ক ও নোংরা চরিত্রের বর্হিপ্রকাশ। হিংসুক সামাজিকভাবেও ঘৃণার পাত্র। সে নিজেই নিজের শত্রু। সে কখনো মানসিকভাবে শান্তি পায় না। সে অন্যের কল্যাণ দেখে অন্তরজ্বালায় দগ্ধ হতে থাকে। আল্লাহ তাআলা সূরা ফালাকে হিংসুকের হিংসা থেকে আশ্রয় চাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।
(আল্লাহর নিকট হিংসুক থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।)

🔰 হিংসা নয়; ঈর্ষা করুন:

কারো কল্যাণ ও ভালো কিছু দেখে তার ক্ষতির চিন্তা না করে তার অনুরূপ বা তার চেয়ে বেশি কল্যাণ প্রত্যাশা করা এবং তা অর্জনের চেষ্টা-সাধন করাকে ঈর্ষা (غبطة) বলা হয়। এটি জায়েয়। এতে ভালো কাজের প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয় এবং সমাজে কল্যাণ ও সৎকর্মের বিস্তৃতি ঘটে।

সুতরাং হিংসা নয়; ঈর্ষা করুন। কারো ক্ষতি নয় বরং কল্যাণ অর্জনে প্রতিযোগিতা করুন।

 ”হিংসা নেক আমল ধ্বংস করে দেয়..এ হাদিসটি কি সহিহ?

উত্তর:

”হিংসা নেক আমল ধ্বংস করে দেয়..।” মর্মে বর্ণিত হাদিসটি সহিহ নয় বরং সনদগতভাবে ضعيف বা দুর্বল।

হাদিসটি নিন্মরূপ:
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:إِيَّاكُمْ وَالْحَسَدَ فَإِنَّ الْحَسَدَ يَأْكُلُ الْحَسَنَاتِ كَمَا تَأْكُلُ النَّارُ الْحَطَبَ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ”তোমরা হিংসা হতে বেঁচে থাকো। কেননা হিংসা সৎকর্মসমূহকে খেয়ে ফেলে, যেমনি ভাবে কাষ্ঠখণ্ড আগুন খায়। ”(আবু দাঊদ পরিচ্ছদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ – সাক্ষাৎ ত্যাগ, সম্পর্কচ্ছেদ ও দোষান্বেষণে নিষেধাজ্ঞা)

 হাদিসটির মান:
এ হাদিসটি য‘ঈফ : আবু দাঊদ ৪৯০৩, য‘ঈফাহ্ ১৯০২, যইফ আত্ তারগীব ১৭২৩, শু‘আবুল ঈমান ৬৬০৮।

হাদিসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদের বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত তবে ইব্রাহীমের দাদা/নানা (جد ابراهيم) ব্যতীত। তিনি মাজহূল বা অপরিচিত। কারণ, তার নাম উল্লেখ করা হয়নি। দেখুন- য‘ঈফাহ্ ১৯০২।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে হিংসুকের হিংসা থেকে রক্ষা করুন। আমীন।
▬▬▬▬❖❖❖▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব