সিয়াম পালন ও ঈদ উদযাপনের ক্ষেত্রে স্বদেশবাসীর বিরুদ্ধাচরণ করা নাজায়েয

প্রশ্ন: আমাদের দেশে একদল দ্বীনদার ভাই আছেন তারা কিছু কিছু ব্যাপারে আমাদের বিরুদ্ধাচরণ করেন। যেমন রমজান মাসের সিয়াম পালনের ক্ষেত্রে তারা খালি চোখে নতুন চাঁদ না-দেখা পর্যন্ত সিয়াম পালন করেন না। কখনও কখনও আমরা তাদের একদিন বা দুইদিন আগে রমজানের সিয়াম পালন শুরু করি। তারাও ঈদুল ফিতরের একদিন বা দুইদিন পরে ঈদ উদযাপন করে থাকেন। আমরা যদি তাদেরকে ঈদের দিনে রোজা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি তারা এই বলে জবাব দেন যে, আমরা খালি চোখে নতুন চাঁদ না-দেখা পর্যন্ত ঈদ করব না এবং রোজা রাখা শুরু করব না। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমরা তা (নতুন চাঁদ) দেখে সিয়াম পালন কর এবং তা (নতুন চাঁদ) দেখে রোজা ছাড়।” তারা যন্ত্রের সাহায্যে নতুন চাঁদ দেখার পদ্ধতি মানেন না। উল্লেখ্য দুই ঈদের নামাযের সময় নির্ধারণের ক্ষেত্রেও তারা আমাদের বিরুদ্ধাচরণ করেন। তারা তাদের নতুন চাঁদ দেখার ভিত্তিতে স্থানীয়ভাবে ঈদ উদযাপনের পরে ঈদ উদযাপন করেন। অনুরূপভাবে তারা ঈদুল আযহার সময় পশু কোরবানী ও আরাফার সময় নির্ধারণের ক্ষেত্রেও আমাদের বি করেন। তারা ঈদুল আযহার দুইদিন পরে ঈদ উদযাপন করেন। অর্থাৎ সমস্ত মুসলিম কোরবানী করার পরে তারা পশু কোরবানী করেন। তারা যা করছেন তা কি সঠিক? আল্লাহ আপনাদের উত্তম প্রতিদান দান করুন।

উত্তর:

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

তাদের উপর ওয়াজিব হল সাধারণ মানুষের সাথে সিয়াম পালন করা, তাদের সাথে ঈদ উদযাপন করা এবং তাদের সাথে দুই ঈদের নামায আদায় করা। এর দলীল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী:

« صوموا لرؤيته وأفطروا لرؤيته فإن غم عليكم فأكملوا العدة » متفق عليه

“তোমরা তা (নতুন চাঁদ) দেখে সিয়াম পালন কর, তা (নতুন চাঁদ) দেখে রোজা ছাড় (ঈদ উদযাপন কর)। আর যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তবে (রোজার) সংখ্যা (৩০ দিন) পূর্ণ কর।” [সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম] এই হাদিসের উদ্দেশ্য হলো- চাঁদ দেখা সাব্যস্ত হলে সিয়াম পালন ও ঈদ উদযাপনের আদেশ দেয়া। সেটা খালি চোখেও হতে পারে অথবা দৃষ্টিশক্তিকে সাহায্যকারী কোন যন্ত্রপাতির মাধ্যমেও হতে পারে। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

” الصوم يوم تصومون والإفطار يوم تفطرون والأضحى يوم تضحون ”
أخرجه أبو داوود (2324) والترمذي (697) ، وصححه الألباني في صحيح الترمذي ( 561 )

“রোজা হল সেদিন যেদিন তোমরা সকলে রোজা পালন কর। ঈদ হল সেদিন যেদিন তোমরা সকলে ঈদ উদযাপন কর। ঈদুল আযহা হলো সেদিন যেদিন তোমরা সকলে পশু কোরবানী কর।’’[হাদিসটি আবু দাউদ (২৩২৪) ও তিরমিযী (৬৯৭) বর্ণনা করেছেন; আলবানী সহীহুত তিরমিযী’ (৫৬১) গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

আল্লাহই তাওফিক দাতা। আমাদের নবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবারবর্গ ও তাঁর সাহাবীগণের উপর আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক।

 গবেষণা ও ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটি (১০/৯৪)