রোজার হুকমে তাকলিফি বা শরয়ি দায়িত্বের প্রকারভেদ

প্রশ্ন: রোজার হুকমে তাকলিফি বা শরয়ি দায়িত্বের প্রকারগুলো কি কি?

উত্তর:

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

যে কোন ব্যক্তির উপর ইসলামের শরয়ি দায়িত্ব ৫ ভাগে বিভক্ত। (১) ওয়াজিব (অবশ্য পালনীয়) (২) হারাম (অবশ্য পরিহার্য্য) (৩) মুস্তাহাব্ব (যা পালন-করা শ্রেয়) (৪) মাকরূহ (যা পরিহার করা শ্রেয়) (৫) মুবাহ (যা পালন করা বা পরিহার করা উভয়টা সমান)। এই ৫ টি হুকুমের প্রত্যেকটি রোজার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। পাঁচটি হুকুমের প্রত্যেকটির খুঁটিনাটি আমরা এখানে আলোচনা করতে যাব না। বরং সংক্ষেপে যতটুকু উল্লেখ করা যায় সে চেষ্টা করব।

এক: ওয়াজিব (ফরজ) রোজা

(১) রমজানের রোজা

(২) রমজানের কাযা রোজা

(৩)     কাফ্‌ফারার রোজা (ভুলক্রমে হত্যার কাফ্‌ফারা,  জিহারের কাফ্‌ফারা,  রমজানে দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাস করার কাফ্‌ফারা, শপথ ভঙ্গের কাফ্‌ফারা )

(৪) মুতামাত্তে হজ্জ আদায়কারীর রোজা; যদি তিনি কোরবানী করার সামর্থ্য না রাখেন। এর দলীল হচ্ছে- আল্লাহ তাআলার বাণী:

( فَمَنْ تَمَتَّعَ بِالْعُمْرَةِ إِلَى الْحَجِّ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِ فَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلاثَةِ أَيَّامٍ فِي الْحَجِّ وَسَبْعَةٍ إِذَا رَجَعْتُمْ )
[2 البقرة : 196]

“তখন যে ব্যক্তি হজ্জের সাথে উমরার সুবিধাও ভোগ করবে, সে (আল্লাহর উদ্দেশ্যে পেশ করবে) যে কুরবানী সহজলভ্য হয়।’’[২ আল-বাক্বারাহ : ১৯৬]

(৫) মান্নতের রোজা

দুই: মুস্তাহাব রোজা

(১) আশূরার রোজা

(২) আরাফার দিনের রোজা

(৩) প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবারের রোজা

(৪) প্রতি মাসে তিনদিন রোজা রাখা

(৫) শাওয়াল মাসে ছয় রোজা

(৬) শাবান মাসের অধিকাংশ দিন রোজা রাখা

(৭) মুহার্‌রম মাসে রোজা রাখা

(৮) একদিন রোজা রাখলে, পরের দিন না-রাখা। এটি (নফল) রোজা রাখার সর্বোত্তম পদ্ধতি।

উপরে উল্লেখিত রোজাগুলোর বিধান হাসান ও সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত এবং এই ওয়েবসাইটে এগুলোর ব্যাপারে আলোচনা রয়েছে।

তিন: মাকরূহ রোজা

(১) শুধু শুক্রবারে রোজা রাখা। দলীল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী:

( لا تصوموا يوم الجمعة إلا أن تصوموا يوماً قبله أو يوماً بعده ) متفق عليه

“আপনারা শুক্রবারে রোজা রাখবেন না। শুক্রবারে রোজা রাখতে চাইলে সাথে আগের দিন অথবা পরের দিনও রোজা রাখবেন।” [সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম]

(২) শুধু শনিবারে রোজা রাখা।  দলীল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী:

( لا تَصُومُوا يَوْمَ السَّبْتِ إِلا فِيمَا افْتَرَضَ اللَّهُ عَلَيْكُمْ ، فَإِنْ لَمْ يَجِدْ أَحَدُكُمْ إِلا لِحَاءَ عِنَبَةٍ أَوْ عُودَ شَجَرَةٍ )
. رواه الترمذي ( 744 ) وحسَّنه وأبو داود ( 2421 ) وابن ماجه ( 1726 ) وصححه الألباني في “إرواء الغليل” (960)

“আপনারা ফরজ রোজা ছাড়া শনিবারে কোন রোজা রাখবেন না। এমনকি আপনাদের কেউ যদি (খাওয়ার জন্য) আঙ্গুর গাছের বাকল বা গাছের কাণ্ড ছাড়া অন্য কিছু না পায় তা সত্ত্বেও।’’[হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম তিরমিযী (৭৪৪) এবং হাদিসটিকে হাসান  আখ্যায়িত করেছেন; আবু দাউদ (২৪২১), ইবনে মাজাহ (১৭২৬) এবং আলবানী তাঁর ‘ইরওয়াউল গালীল’(৯৬০) গ্রন্থে হাদিসটিকে সহীহ আখ্যায়িত করেছেন।]

ইমাম তিরমিযী বলেন:

“মাকরূহ হওয়ার অর্থ হলো- কোন ব্যক্তির সুনির্দিষ্টভাবে শনিবারে রোজা রাখা। কারণ ইহূদীরা শনিবারকে বিশেষ মর্যাদা দেয়।” (সমাপ্ত)

চার: হারাম রোজা

(১) ঈদুল ফিত্বর, ঈদুল আযহা ও তাশরীকের দিনগুলোতে রোজা রাখা। তাশরীক এর দিন হলো- ঈদুল আযহার পরের তিনদিন। (১১, ১২ ও ১৩ জিলহজ্ব)

(২) সন্দেহের দিন রোজা রাখা

সন্দেহের দিন: ৩০ শে শাবান; আকাশে মেঘ থাকায় যদি সেদিন নতুন চাঁদ দেখা না যায় তবে সেদিনকে সন্দেহের দিন বলা হয়। আর যদি আকাশ পরিষ্কার থাকে তবে এতে সন্দেহের কিছু থাকে না।

(৩) হায়েজ ও নিফাস অবস্থায় রোজা রাখা।

পাঁচ: মুবাহ রোজা

যে রোজা উপরে উল্লেখিত চার প্রকারের কোন প্রকারের অন্তর্ভুক্ত নয়। এখানে মুবাহ (বৈধ) হওয়া দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- যে দিনের রোজা রাখার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোন আদেশ বা নিষেধ বর্ণিত হয়নি। যেমন মঙ্গল ও বুধবারে রোজা পালন। যদিও সাধারণভাবে যে কোন সময় নফল রোযা রাখা মুস্তাহাব ইবাদত।

দেখুন: আল-মাওসুআহ  আল-ফিক্বহিয়্যাহ (ফিক্বহী বিশ্বকোষ) (২৮/১০-১৯), আশ-শার্‌হুল- মুমতি‘আহ (৬/৪৫৭-৪৮৩)

আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।

https://islamqa.info/bn/66909