রমযান মাস ৩০ দিনের হোক কিংবা ২৯ দিনের হোক ২১ শে রমযানের রাত থেকে শেষ দশক শুরু হয়

আমার এক বন্ধু রমযানের শেষ দশক সম্পর্কে আমার মনে একটি প্রশ্নের সৃষ্টি করেছেন। আমার বন্ধু বলেন: যদি রমযান মাস ২৯ দিনের হয় তাহলে ১৯-২৯ তারিখ পর্যন্ত শেষ দশক হবে। শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিগুলো আমি কিভাবে জানতে পারি? এ ব্যাপারে আপনাদের কী প্রত্যুত্তর?

আলহামদুলিল্লাহ।

রমযানের শেষ দশক ২১ শে রমযানের রাত থেকে শুরু হয়। চাই ৩০দিনে মাস হোক কিংবা ২৯ দিনে। এটি প্রমাণ করে সহিহ বুখারী (৮১৩) ও সহিহ মুসলিমের (১১৬৭) হাদিস: আবু সাঈদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের প্রথম দশ দিন ইতিকাফ করলেন। আমরাও তাঁর সঙ্গে ইতিকাফ করলাম। তখন জিবরাঈল (আঃ) এসে বললেন: ‘আপনি যা তালাশ করছেন সেটা সামনে’। এরপর তিনি মধ্যবর্তী দশ দিন ইতিকাফ করলেন, আমরাও তাঁর সাথে ইতিকাফ করলাম। তখন পুনরায় জিবরাঈল (আঃ) এসে বললেন: ‘আপনি যা তালাশ করছেন সেটা সামনে’। এরপর রমযানের বিশ তারিখ সকালে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিতে দাঁড়িয়ে বললেন: ‘যারা আল্লাহর নবীর সঙ্গে ইতিকাফ করতে চান তারা যেন ফিরে আসেন (আবার ইতিকাফ করেন)। কেননা আমাকে স্বপ্নে লাইলাতুল কদর অবগত করানো হয়েছে। তবে আমাকে তা (নির্ধারিত তারিখটি) ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিঃসন্দেহে তা শেষ দশ দিনের কোন এক বেজোড় তারিখে। স্বপ্নে দেখলাম যেন আমি কাদা ও পানির উপর সিজদা করছি। তখন মসজিদের ছাদ খেজুরের ডাল দ্বারা নির্মিত ছিল। আমরা আকাশে কোন কিছুই (মেঘ) দেখিনি। হঠাৎ করে পাতলা একটি মেঘ আসল এবং আমাদের উপর বৃষ্টি নামল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করলেন। এমন কি আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কপাল ও নাকের অগ্রভাগে পানি ও কাঁদার চিহ্ন দেখতে পেলাম। এভাবেই তাঁর স্বপ্ন সত্যে পরিণত হলো।”

সহিহ বুখারীর অপর এর রেওয়ায়েতে (২০২৭) এসেছে: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের মধ্যম দশকে ইতিকাফ করতেন। এক বছর তিনি ইতিকাফ করলেন। যখন একুশের রাত এল, যে রাতের সকালে তিনি তাঁর ইতিকাফ হতে বের হতেন, তখন তিনি বললেন: যারা আমার সংগে ইতিকাফ করেছে তারা যেন শেষ দশকও ইতিকাফ করে। আমাকে স্বপ্নে এই রাত (লাইলাতুল কদর) দেখানো হয়েছিল, পরে আমাকে তা (সঠিক তারিখ) ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। অবশ্য আমি স্বপ্নে দেখতে পেয়েছি যে, ঐ রাতের সকালে আমি কাদা-পানির মাঝে সিজদা করছি। তোমরা তা শেষ দশকে তালাশ কর এবং প্রত্যেক বেজোড় রাতে তালাশ কর। পরে এই রাতে আকাশ হতে বৃষ্টি হল। মসজিদ ছিল ছাদবিহীন। তাই মসজিদে বৃষ্টির ফোটা পড়ল। একুশের রাতের সকালে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কপালে কাদা-পানির চিহ্ন আমার এ দু’চোখ দেখতে পায়।”

ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন:

“এটা সুস্পষ্ট যে, খোতবাটি ছিল বিশ তারিখ ভোরে। আর বৃষ্টি নেমেছে ২১ তারিখ রাতে।”[ফাতহুল বারী (৪/২৫৭) থেকে সমাপ্ত]

সহিহ বুখারী (২০১৭) ও সহিহ মুসলিম (১১৬৭)এর অপর এক রেওয়ায়েতে এসেছে যে, “রাসূলুল্লাহ্‌  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসের মাঝের দশকে ইতিকাফ করতেন। বিশ তারিখ গত হয়ে যখন সন্ধ্যা হত এবং একুশ তারিখ শুরু হত তখন তিনি ঘরে ফিরে আসতেন। এবং তাঁর সঙ্গে যারা ইতিকাফ করেছিলেন সকলেই নিজ নিজ বাড়ীতে ফিরে আসতেন।” এর থেকেও বুঝা যায় যে, শেষ দশক ২১ শে রমযানের রাত থেকে শুরু হয়।

এ কারণে সংখ্যা গরিষ্ঠ আলেমগণের মাযহাব (এদের মধ্যে চার মাযহাবের ইমামগণও রয়েছেন) হচ্ছে: যে ব্যক্তি শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতে চায় সে যেন একুশের রাত শুরু হওয়ার আগে সূর্যাস্তের পূর্বেই মসজিদে প্রবেশ করে।

আরও জানতে দেখুন: 14046 নং প্রশ্নোত্তর।

শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলো হচ্ছে- একুশ, তেইশ, পঁচিশ, সাতাশ ও ঊনত্রিশ এর রাত।

ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন:

লাইলাতুল কদর রমযানের মধ্যেই রয়েছে। এ রাত রমযানের শেষ দশকেই রয়েছে। শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতেই রয়েছে। বেজোড় রাতগুলোর সুনির্দিষ্ট কোন রাতে নেই। এ বিষয়ে বর্ণিত হাদিসগুলোর সম্মিলিত নির্দেশনা এটাই প্রমাণ করে।[ফাতহুল বারী (৪/২৬০) থেকে সমাপ্ত]

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব ওয়েবসাইট।।