মৃত ব্যক্তির উপর রমাযানের ফরয রোযা বাকি থাকলে তার উত্তরাধিকারীদের কী করণীয়

উত্তর:
মৃত ব্যক্তির উপর রমাযানের ফরয রোযা কাজা থাকলে তার উত্তরাধিকারগণ তার পক্ষ থেকে রোযাগুলো আদায় করবে? না কি তার পক্ষ থেকে প্রতিটি রোযার বিনিময়ে একজন অসহায় মানুষকে একবেলার খাবার দিবে ..এ বিষয়ে বিজ্ঞ আলেমের মাঝে দ্বিমত রয়েছে।

তবে দলীলের আলোকে ২য় মতটি অধিক অগ্রাধিকারযোগ্য অভিমত। অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির প্রতিটি রোযার বিনিময়ে তার উত্তরাধিকারীগণ একজন গরিব-অসহায় মানুষকে অর্ধ সা’ (প্রায় সোয়া কেজি চাল, গম ইত্যাদি) খাদ্যদ্রব্য প্রদান করাই যথেষ্ট।

এ মর্মে মা জননী আয়েশা ও ইবনে আব্বাস রা. থেকে মতামত পাওয়া যায়। যেমন:

 আয়েশা রা. এর সিদ্ধান্ত: উমরা রা. বর্ণনা করেন, তার মা মারা যান এবং তার উপর রমাযানের রোযা বাকি ছিল। আয়েশা রা. কে জিজ্ঞেস করলেন: আমি কি আমার মায়ের পক্ষ থেকে উক্ত রোযাগুলো পুরা করব? তিনি বললেন: না। বরং প্রতিটি রোযার বিনিময়ে একজন মিসকিনকে অর্ধ সা (প্রায় সোয়া কেজি চাল, গম ইত্যাদি) খাদ্য দ্রব্য প্রদান কর। [ তাহাবী এবং ইবনে হাযাম, ইবনুত তুরকুমানী বলেন, এ সনদটি সহীহ।]

 ইবনে আব্বাস রা. সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, কোন যদি ব্যক্তি রমাযানে অসুস্থ হওয়ার কারণে রোযা রাখতে না পারে এবং এ অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে তবে তার পক্ষ থেকে খাবার দিতে হবে এবং তা আর কাযা করার প্রয়োজন নাই। কিন্তু যদি মৃতের উপর মানতের রোযা বাকি থাকে তবে তার নিকটাত্মীয়গণ তার পক্ষ থেকে তা কাযা করবে। [এটি বর্ণনা করেন আবু দাউদ। এর সনদ বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ।]

ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ. এ মতই পোষণ করেছেন।

তাদের মতে, “যে ব্যক্তি এমন মৃত্যু বরণ করল এমন অবস্থায় যার উপর রোযা বাকি আছে তার ওলী তথা নিকটাত্মীয়গণ তার পক্ষ থেকে রোযা রাখবে।” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম) এ হাদিসটি মানতের ফরয রোযার বিষয়ে প্রযোজ্য; রমাযানের রোযার বিষয়ে নয়। কারণ হাদিসের পূর্বাপর বিস্তারিত আলোচনা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয়।

🌐 যুগ শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস আল্লামা নাসিরুদ্দিন আলবানী রহ. এই মতকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে বলেন:
“উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. এবং উম্মতের শ্রেষ্ঠ আলেম ইবনে আব্বাস রা. যে সমাধান দিয়েছেন এবং ইমামুস সুন্নাহ ইমাম আহমদ বিন হাম্বল যে মত গ্রহণ করেছেন তার প্রতি মনের পরিতৃপ্তি আসে এবং অন্তর ধাবিত হয়। আর এ মাসআলায় এটাই সবচেয়ে ইনসাফ পূর্ণ এবং মধ্যপন্থী মত। এর মাধ্যমে কোন হাদিসকেই বাদ দেয়া হয় না বরং সবগুলোর হাদিসের সঠিক অর্থ বুঝতে পারার সাথে সাথে সবগুলোর প্রতি আমল হয়। ”[আহকামুল জানায়িয, আলবানী রাহ.]

মোটকথা, মৃত ব্যক্তির উপর যদি রমাযানের ফরয রোযা বাকি থাকে তবে সব চেয়ে মধ্যপন্থী কথা হল, তার উত্তরাধীগণ তার পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে প্রতিটি রোযার বিনিময়ে একজন মিসকিনকে আধা সা বা প্রায় সোয়া এক কেজি খাদ্যদ্রব্য প্রদান করবে।
▬▬▬▬✪✪✪▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব