বিয়ে করলে অর্ধেক দ্বীন পূর্ণ হয়” এ হাদিসটি কি সহিহ

প্রশ্ন: “বিয়ে করলে অর্ধেক দ্বীন পূর্ণ হয়” এ হাদিসটি কি সহিহ? সহীহ হলে বিয়ের মাধ্যমে কিভাবে দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ হয়?

উত্তর:
ইসলামী শরিয়তে বিবাহ করার প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব এসেছে। এটি নবী-রসূলদের আদর্শ। বিবাহের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে অসংখ্য ফেতনা, ক্ষয়-ক্ষতি, অসুখ-বিসুখ এবং নানা সমস্যা থেকে মুক্তি দান করেন। তাই তো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنْ اسْتَطَاعَ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ.
‘‘হে যুবকেরা! তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি (বিবাহের অর্থাৎ স্ত্রীর ভরণপোষণ ও রতিক্রিয়ার) সামর্থ্য রাখে সে যেন বিবাহ করে। কারণ, বিবাহ চক্ষুকে সংযত করে এবং লজ্জাস্থান হিফাজত করে। আর যে ব্যক্তি ঐ সামর্থ্য রাখে না, সে যেন রোযা রাখে। কারণ, তা যৌনেন্দ্রীয় দমনকারী।’’[বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩০৮০নং)]

🌀 বিবাহের মাধ্যমে দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ হয়:

💠 হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إذَا تَزَوَّجَ العَبدُ فَقَد استَكمَلَ نِصْفَ الدِّين فَلْيَتَّقِ اللهَ في النِّصف البَاقي.
‘‘ বান্দা যখন বিবাহ করে, তখন সে তার অর্ধেক ঈমান (দ্বীন) পূর্ণ করে। অতএব বাকী অর্ধেকাংশে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে।’’[সহীহ আল-জামিউস সাগীর ওয়া যিয়াদাতুহ হা/ ৬১৪৮, সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, ইমাম আলবানী বলেন, হাদিসটি হাসান লিগাইরিহ]

💠 আনাস বিন মালিক রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ رَزَقَهُ الله امْرَأَةً صَالِحَةً فَقَدْ أَعَانَهُ عَلٰى شَطْرِ دِينِهِ فَلْيَتَّقِ الله فِي الشَّطْرِ الْبَاقِي
‘‘আল্লাহ যাকে পুণ্যময়ী স্ত্রী দান করেছেন, তাকে তার অর্ধেক দ্বীনে সাহায্য করেছেন। সুতরাং বাকী অর্ধেকের ব্যাপারে তার আল্লাহকে ভয় করা উচিত।’’ (ত্বাবারানীর আওসাত্ব হা/ ৯৭২, হাকেম হা/ ২৬৮১, বাইহাক্বী, সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব হা/ ১৯১৬, ইমাম আলবানী এটিকে হাসান লি গাইরেহী বলেছেন। )

🌀 বিবাহের মাধ্যমে কিভাবে দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ হয়?

কোন পুরুষ যদি কোন সৎ-দ্বীনদার নারীকে বিবাহ করতে পারে তাহলে সে যেন জান্নাতে যাওয়ার অর্ধেক পথ অতিক্রম করল। কেননা, দুনিয়াতে মানুষ যত দ্বীন বিরোধী কার্যক্রম, পাপাচার ও অন্যায়-অপকর্ম করে তা দুটির জিনিসের মাধ্যমে করে।
১. দু চোয়ালের মধ্যস্থিত বস্তু তথা মুখ ও জিহ্বা।
২. দু রানের মধ্যস্থিত বস্তু তথা লজ্জাস্থান।
আর তাই তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
مَنْ يَّضْمَنْ لِيْ مَا بَيْنَ لَـحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَضْمَنْ لَهُ الْـجَنَّةَ.
‘‘যে ব্যক্তি আমার জন্য তার দু’ চোয়ালের মধ্যস্থিত বস্তু (তথা মুখ ও জিহ্বা) এবং দু’ পায়ের মধ্যস্থিত বস্তু (তথা লজ্জাস্থান) এর জিম্মাদার হবে আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হবো। (বুখারী ৬৪৭৪)
সুতরাং কোন ব্যক্তি যদি একজন সৎ নারীকে বিবাহ করে তাহলে এর মাধ্যমে তার লজ্জাস্থান হেফাজত হল। সৎ নারী এ জন্য শর্ত করা হয়েছে যে, অসৎ নারীর কারণে হয়ত সে দ্বীন ও দুনিয়া উভয় ক্ষেত্রে আরও ফেতনা-ফ্যাসাদ ও ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন হবে। কিন্তু দ্বীনদার সৎ চরিত্রবান নারী তাকে চরিত্র হেফাযতের পাশাপাশি দ্বীন পালনে সাহায্য করবে। এতে করে সে যেন দ্বীনের পথে টিকে থাকার অর্ধেক অবলম্বন পেয়ে গেলো।
বাকি থাকল আরও অর্ধেক। সুতরাং সে যেন বাকি অর্ধেকের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে। সে মুখকে নিয়ন্ত্রণ করবে। মুখে হারাম খাবার ও পানীয় প্রবেশ করাবে না, ভাষাকে নিয়ন্ত্রণ করবে এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি মূলক কোন কথা বলবে না। এভাবে সে দ্বীনের বাকি অর্ধেক পূরণ করবে।
———————
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
FB/AbdullaahilHadi
Daee at jubail dawah & guidance center. KSA