পারস্পারিক মনোমালিন্য দূর করে মীমাংসা করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ

প্রশ্ন: আমি জানি যে, গিবত করা মহাপাপ। কিন্তু আমার তিন মামাদের ফ্যামিলিতে কেউ কারো সাথে কথা বলে না। তাদের মাঝে কোনো বিষয়ে ঝগড়া ও মনোমালিন্য হয়েছে। এখন আমি যদি তাদের বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করি। আর তারা একে অপরের দোষগুলো আমাকে শোনায়। সব শুনে আমি তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করি। তাহলে কি আমার গুনাহ হবে? যেহেতু তারা অন্যের অসাক্ষাতে আমার কাছে অন্যের গীবত করছে।

উত্তর:
মানুষের মাঝে ঝগড়া-বিবাদ মিটানোর উদ্দেশ্যে তাদের পরস্পরের অভিযোগ শোনা জায়েয। অর্থাৎ এটি হারাম গিবতের অন্তর্ভুক্ত নয়।
ইমাম নওবী রহ. বলেন, “সৎ ও শরীয়ত সম্মত উদ্দেশ্য সাধন যদি গিবত ছাড়া সম্ভব না হয়, তাহলে এক্ষেত্রে গিবত জায়েয।” তার মতে ছয় ধরণের গিবত জায়েয। তন্মধ্যে একটি হল, দোষ-ত্রুটি সংশোধনের জন্য কোন ব্যক্তির দোষ এমন ব্যক্তির কাছে বলা, যে তা সংশোধন করার ক্ষমতা রাখে।” (আল্লামা ইমাম নববী রচিত মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ)
বরং লোকদের মাঝে ঝগড়া-বিবাদ মিটানোর চেষ্টা করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ।
🌀 এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَإِن طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا
‘‘ইমানদারদের মধ্যকার দু’টি দল যদি পরস্পর লড়াই করে, তাহলে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও” (সূরা হুজুরাত: ৯)
🌀 তিনি আরও বলেন:
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
“তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করে দাও এবং আল্লাহকে ভয় করো যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও’’। (সূরা হুজুরাত: ৯)

পারস্পারিক ধন্ধ মিটিয়ে মীমাংসা করার বিষয়টিকে ইসলামে এত বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যে, এ উদ্দেশ্যে কিছু মিথ্যা কথা বলারও অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যেমন:
🌀 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
لَيْسَ الْكَذَّابُ الَّذِى يُصْلِحُ بَيْنَ النَّاسِ، فَيَنْمِى خَيْرًا، أَوْ يَقُولُ خَيْرًا
“সে ব্যক্তি মিথ্যাবাদী নয়, যে মানুষের মধ্যে মীমাংসা করার জন্য (নিজের থেকে) ভালো কথা পৌঁছে দেয় কিংবা ভালো কথা বলে।” [বুখারী হা/২৬৯২; মুসলিম হা/২৬০৫]

আর বিবদমান সকল পক্ষের বক্তব্য ও অভিযোগগুলো শোনা সমস্যা সমাধানের জন্য কেবল সহায়ক নয় বরং খুব গুরুত্বপূর্ণ। অন্যথায় সুষ্ঠু সমাধান করা সহজ নয়।

সুতরাং যে বিবদমান ফ্যামিলিগুলোর মাঝে মনোমালিন্যের কারণে কথা-বার্তা বন্ধ আছে আপনি যদি উদ্যোগী হয়ে তাদের সকল পক্ষের অভিযোগ ও বক্তব্য শুনে সমাধানের চেষ্টা করেন তাহলে আপনি বিরাট সওয়াবের অধিকারী হবেন ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাওফিক দান করুন।
••••••🌐💠🌐•••••••
উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব