দাঙ্গাবাজ, ঝগড়াটে ও চরিত্রহীন বংশের সন্তান কি ভালো হতে পারে? এমন খারাপ মানুষ ভালো হওয়ার জন্য কী করণীয়?

প্রশ্ন: সব বংশেই ভালো-খারাপ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন মানুষ কম বেশি থাকে। কিন্তু কোন খারাপ বংশের লোক যদি মারপিট, ঝামেলা-ফ্যাসাদ ও ঝগড়াটে হয়- এমনকি তারা ভাইয়ে-ভাইয়েও মারপিট করে। এ সব কারণে তাদেরকে খারাপ বংশের লোক বলেই সবাই জানে। বংশানুক্রমে এই বদ চরিত্র তাদের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও দেখা যায়। আমার প্রশ্ন হল, খারাপ বংশ হলেই কি তাদের ছেলে-মেয়েরা খারাপ হবে? তারা কি ভালো হতে পারে না?
কোন এমন বদ চরিত্রের মানুষ যদি তার বংশের মত না হয়ে ভালো হতে চায় তাহলে তার কী কী করণীয় আছে? ইসলামের আলোকে বিষয়টি বিস্তারিত জানালে উপকৃত হবো ইনশাআল্লাহ।

উত্তর:
কোন বংশের লোকজন ঝগড়া-ঝাটি এবং দাঙ্গা-হাঙ্গামায় সুখ্যাতি পাওয়ার পরও সেই বংশের সকল ছেলে মেয়ে যে একই রকম হবে তা আবশ্যক নয়। তাদের মধ্য থেকেও উত্তম বৈশিষ্ট্য ও চরিত্র সম্পন্ন প্রজন্ম বের হয়ে আসা সম্ভব।
যে আরবের মানুষগুলো বংশানুক্রমে দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষ এবং যুদ্ধবাজ হিসেবে সুপরিচিত ছিল তারাই ইসলামের সংস্পর্শে এসে পৃথিবীর সবচেয়ে আদর্শ চরিত্রবান এবং অনুসরণীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন। ইতিহাস তার সাক্ষী।
সুতরাং খারাপ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন বংশ থেকে ভালো চরিত্রের সন্তান বের হয়ে আসা অস্বাভাবিক নয়।
ইসলাম চর্চা এবং ইসলামের আলোয় আলোকিত হওয়ার মাধ্যমেই একজন মানুষ নিজেকে সম্পূর্ণভাবে বদলে দিতে পারে।

🔹 সৎ ও আদর্শবান মানুষ হওয়ার ১০টি নির্দেশনা:

■ ১. নিজের জীবনে পুরোপুরি ইসলাম মেনে চলা।
■ ২. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরামের জীবনী অধ্যয়ন করে তাদের কে অনুসরণ করা।
■ ৩. ইবাদত-বন্দেগিতে মনোযোগী হওয়া। ফরয ইবাদতগুলো সঠিকভাবে আদায় করার পাশাপাশি যথাসাধ্য নফল ইবাদত করা। যেমন, নফল সালাত (তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত, তাহিয়াতুল ওযু, তাহিয়াতুল মসজিদ ইত্যাদি) নফল রোযা (প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার, আইয়ামে বীয তথা প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোযা, আশুরার রোযা, আরাফার রোযা ইত্যাদি), সাধ্য অনুযায়ী নফল দান-সদকা করা ইত্যাদি।
■ ৪. অতীতের অন্যায় অপকর্ম এবং জাহেলিয়াত পূর্ণ আচরণ থেকে খাঁটি অন্তরে তওবা করা এবং ভবিষ্যতে আর কখনো জেনে বুঝে ঐ সকল অপকর্মে যুক্ত না হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে অঙ্গীকার করা।
■ ৫. অসৎ ও খারাপ চরিত্রের মানুষের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা
■ ৬.উন্নত চরিত্র এবং সৎ মানুষের সংস্পর্শে থাকা।
■ ৭.রাগ নিয়ন্ত্রণ করা। রাগ নিয়ন্ত্রণের ফজিলত সম্পর্কে কোরআন এবং সুন্নাহর বক্তব্য এবং পদ্ধতি গুলো তার জন্য সহায়ক হতে পারে।
■ ৮. নিয়মিত কুরআন, কুরআনের তরজমা ও তাফসীর এবং হাদিসের কিতাব অধ্যয়ন করার পাশাপাশি বিজ্ঞ আলেমদের দরসে হাজির হওয়া বা ইন্টারনেট থেকে তাদের লেকচারগুলো শ্রবণ করা এবং তাদের লিখিত বই-পুস্তক অধ্যয়ন করা।
■ ৯. নিজের চরিত্রের ত্রুটিপূর্ণ বিষয়গুলো চিহ্নিত করে সেগুলো দূর করার চেষ্টা করা এবং যথাসম্ভব সমাজের এতিম, দু:স্থ, বিধবা, ভবঘুরে, অসুস্থ ইত্যাদি বিভিন্ন শ্রেণীর গরিব-অসহায় মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা ও সেবা শুশ্রুষা করা।
■ ১০. সর্বোপরি চরিত্র সংশোধনের জন্য মহান রবের দরবারে দোয়া করা (এই মর্মে হাদিসে বিশেষ দোয়া বর্ণিত হয়েছে)
আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন।

উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব