কুরবানীর চামড়া বিক্রয় করা বৈধ কিনা?

সাম্প্রতিক সময়ে বঙ্গদেশের কথিপয় দাঈগন বলছেন, কুরবানীর পশুর চামড়া সরাসরি ফকির, মিসকীনদের দান করে দিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই চামড়া বিক্রয় করা বৈধ নয়।
.
এমতাবস্থায় কিছু মানুষ দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েছেন! তাই ব্যক্তিগতভাবে আমি প্রিয়মুখ উস্তায মতিউর রহমান মাদানী [হাফিয্বাহুল্লাহ-র] দারস্থ হয়েছিলাম এবিষয়টি নিয়ে । উনার অনুমতিক্রমে উত্তর-টি হুবহু পেশ করা হল :
.

🔸প্রশ্ন :

উস্তায! একটি প্রশ্নের উত্তর জানিয়ে আমাদেরকে ধন্য করবেন। প্রশ্নটি হচ্ছে, আমরা প্রতি বছর কুরবানীর পশুর চামড়া বিক্রয় করে বিক্রয়কৃত অর্থ ফকির মিসকীনদের মাঝে বিলি করে দেই। কিন্তু বর্তমানে কোনো কোনো দাঈ বলছেন, কুরবানীর পশুর চামড়া বিক্রি করা বৈধ নয় বরং গোটা চামড়াই দান করে দিতে হবে! কিন্তু আপনি নিশ্চয়ই জানেন আমাদের দেশের ফকির/মিসকীনরা চামড়া নিতে চায় না, বরং তারা নগদ টাকা চায়! এমতাবস্থায় আমাদের কি করনীয়?
.

🔸উত্তর :

প্রিয় ভাই! গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

এক : কুরবানীর চামড়া কেউ যদি শোধন করে নিজেই ব্যবহার করতে চায় তাহলে তা নিজে ব্যবহার করা জায়েজ। আর যদি নিজে ব্যবহার করতে অক্ষম হয় সেক্ষেত্রে সরাসরি চামড়াটা ফকির, মিসকীনদের দান করে দেওয়া উচিত।

দুই : আমাদের ভারত উপমহাদেশের সমস্যা হচ্ছে, ফকির / মিসকীনরা চামড়া নিতে চায় না বরং তারা নগদ অর্থ চায়। এক্ষেত্রে চামড়াগুলো বিক্রয় না করলে নষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ’লা যেকোনো সম্পদ নষ্ট বা অপচয় করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, “তোমরা খাও পান কর, কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না’’।
—– [সূরা আ’রাফ: ৩১]

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “তোমরা সহজ পন্থা অবলম্বন কর, কঠিন পন্থা অবলম্বন করো না,মানুষকে সুসংবাদ দাও, বিরক্তি সৃষ্টি করো না। [ বুখারী : ৬৯ ; মুসলিম : ৩২/৩, ১৭৩৪, আহমাদ : ১৩১৭৪ ]
.

আমরা দেখতে পাই যে, আরব ভুখন্ডে কুরবানীর পশুর চামড়াগুলো ফেলে দেওয়া হচ্ছে অথচ এই চামড়া দিয়ে আমাদের দেশে ফকির,মিসকীনদের অভাব দূর হয়, দ্বীনী প্রতিষ্ঠানগুলো সচল রাখার পাশাপাশি বহুমুখী দ্বীনী খেদমতের আঞ্জাম দেয়া যায়।

তিন : আল্লামাহ উবাইদুল্লাহ মুবারকপুরী [রাহিমাহুল্লাহ ]-সহ উপমহাদেশীয় কিবার উলামাদের ফাতওয়া হচ্ছে, এমতাবস্থায় কুরবানীর পশুর চামড়া বিক্রয় করা বৈধ। কেননা, একদিকে চামড়াগুলো ফেলে দিলে অপচয় হবে, অন্যদিকে ফকির/ মিসকীনরাও চামড়া নিতে চাচ্ছেনা! তাই নিরুপায় হয়ে চামড়াগুলো বিক্রি করে সেই টাকা হক্বদারদের মাঝে বিলি করে দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে বিক্রয়কৃত অর্থ নিজে ভোগ করা যাবেনা। ওয়াল্লাহু আল’ম।
.

🔸উত্তর প্রদানে :
উস্তায মতিউর রাহমান মাদানী হাফিয্বাহুল্লাহ।
দ্বায়ী,দাম্মাম ইসলামিক কালচারাল সেন্টার।
সৌদিআরব।

⦁ বি:দ্র : উত্তর-টি WhatsApp এ প্রদান করেছেন।
.

⦁ সংকলক :
আপনাদের শুভাকাঙ্ক্ষী,
আখতার বিন আমীর।
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂