কার অধিকার বেশি পিতা-মাতার নাকি স্ত্রী-পরিবারের

প্রশ্ন: ইসলামের দৃষ্টিতে একজন পুরুষের জন্য তার পিতামাতা এবং স্ত্রী-সন্তানের দায়িত্ব বহন করা ফরয। কিন্তু সে কাকে বেশি অগ্রাধিকার দিবে? পিতামাতাকে না কি স্ত্রী-সন্তানদেরকে?
উত্তর:
এ ক্ষেত্রে দুটি দিক রয়েছে। একটি হল, সদ্ব্যবহার। আরেকটি হল, অর্থ খরচ ও ব্যয়ভার বহন করা।

 সদ্ব্যবহার পাওয়ার ক্ষেত্রে মায়ের অধিকার সবচেয়ে বেশি, তারপর পিতার অধিকার তারপর আত্মীয়তার বন্ধনে যে সবচেয়ে কাছে । এ মর্মে হাদিস হল:
عَن أبى هريرة رضي الله عنه، قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَقَالَ: يَا رَسُولَ الله، مَنْ أحَقُّ النَّاسِ بِحُسْنِ صَحَابَتِي ؟ قَالَ: «أُمُّكَ»قَالَ : ثُمَّ مَنْ ؟ قَالَ: «أُمُّكَ»، قَالَ : ثُمَّ مَنْ ؟ قَالَ : «أُمُّكَ»، قَالَ : ثُمَّ مَنْ ؟ قَالَ: «أبُوكَ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وفي رواية : يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، مَنْ أَحَقُّ بحُسْنِ الصُّحْبَةِ ؟ قَالَ: أُمُّكَ، ثُمَّ أُمُّكَ، ثُمَّ أُمُّكَ، ثُمَّ أَبَاكَ، ثُمَّ أدْنَاكَ أدْنَاكَ
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেন, একটি লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার কাছ থেকে সদ্ব্যবহার পাওয়ার বেশী হকদার কে?’ তিনি বললেন, ‘‘তোমার মা।’’ সে বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বললেন, ‘‘তোমার মা।’’ সে বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বললেন, ‘‘তোমার মা।’’ সে বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বললেন, ‘‘তোমার বাপ।’’ (বুখারী ও মুসলিম)

অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘হে আল্লাহর রাসূল! সদ্ব্যবহার পাওয়ার বেশী হকদার কে?’ তিনি বললেন, ‘‘তোমার মা, তারপর তোমার মা, তারপর তোমার মা, তারপর তোমার বাপ, তারপর যে তোমার সবচেয়ে নিকটবর্তী।’’ [রিয়াযুস স্বা-লিহীন হাদিস নম্বরঃ [321] অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ (كتاب المقدمات) পরিচ্ছদঃ ৪০ : পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার এবং আত্মীয়তা অক্ষুণ্ণ রাখার গুরুত্ব,
তাওহীদ পাবলিকেশন]

 তবে অর্থ খরচের ক্ষেত্রে কথা হল, যদি তার পর্যাপ্ত অর্থ-সম্পদ থাকে তাহলে নিজের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততির পাশাপাশি পিতামাতার জন্যও অর্থ খরচ করা আবশ্যক। কিন্তু সে সামর্থ না থাকলে তার স্ত্রী ও সন্তানগণ বেশি হকদার। কারণ ইসলাম স্ত্রী-সন্তানদের ভোরণ-পোষণ করাকে পুরুষের জন্য ফরয করেছে। এ মর্মে হাদিস ও আলেমদের বক্তব্য প্রদান করা হল:

🌐 জাবির (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
ابْدَأْ بِنَفْسِكَ فَتَصَدَّقْ عَلَيْهَا فَإِنْ فَضَلَ شَىْءٌ فَلأَهْلِكَ فَإِنْ فَضَلَ عَنْ أَهْلِكَ شَىْءٌ فَلِذِي قَرَابَتِكَ فَإِنْ فَضَلَ عَنْ ذِي قَرَابَتِكَ شَىْءٌ فَهَكَذَا وَهَكَذَا ‏”‏ ‏.‏ يَقُولُ فَبَيْنَ يَدَيْكَ وَعَنْ يَمِينِكَ وَعَنْ شِمَالِكَ ‏.‏
“এ অর্থ তুমি প্রথমে তোমার নিজের জন্য ব্যয় কর। তারপর যদি কিছু বাকি থাকে তাহলে তোমার পরিবারের লোকদের জন্য তা ব্যয় কর। অতঃপর তোমার নিকটাত্মীয়দের জন্য ব্যয় কর, এরপরও যদি কিছু অবকাশ থাকে তাহলে তা এদিকে সেদিকে ব্যয় কর।” এ বলে তিনি সামনে, ডানে ও বামে হাত দিয়ে ইঙ্গিত করলেন।
[সহীহ মুসলিম, হাদিস নম্বরঃ [2203] অধ্যায়ঃ ১৩। যাকাত (كتاب الزكاة), পরিচ্ছদঃ ১৩. সর্বপ্রথম নিজের জন্য, অতঃপর ঘরের লোকদের জন্য, অতঃপর আত্মীয়-স্বজনের জন্য ব্যয় করা, হাদিস একাডেমি]

🌐 আরেকটি হাদিস:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ – رضي الله عنه – قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ – صلى الله عليه وسلم – فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ! عِنْدِي دِينَارٌ قَالَ: «أَنْفِقْهُ عَلَى نَفْسِكَ». قَالَ: عِنْدِي آخَرُ قَالَ: «أَنْفِقْهُ عَلَى وَلَدِكَ». قَالَ: عِنْدِي آخَرُ قَالَ: «أَنْفِقْهُ عَلَى أَهْلِكَ». قَالَ: عِنْدِي آخَرُ, قَالَ: «أَنْفِقُهُ عَلَى خَادِمِكَ». قَالَ عِنْدِي آخَرُ, قَالَ: «أَنْتَ أَعْلَمَ». أَخْرَجَهُ الشَّافِعِيُّ وَاللَّفْظُ لَهُ, وَأَبُو دَاوُدَ, وَأَخْرَجَهُ النَّسَائِيُّ وَالْحَاكِمُ بِتَقْدِيمِ الزَّوْجَةِ عَلَى الْوَلَدِ – حسن
আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত; তিনি বলেনঃ কোন লোক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললো: আমার কাছে একটা দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) রয়েছে।
তিনি বললেন: তুমি ওটা তোমার জন্য ব্যবহার কর।

লোকটা বললো: আরো একটা আছে।
তিনি বললেন: তুমি ওটা তোমার সন্তানের জন্য খরচ করো।

লোকটি বললো: আমার কাছে আরো একটা আছে।
তিনি বললেন: তুমি তা তোমার স্ত্রীর জন্য খরচ কর।

লোকটি বললো: আমার নিকট আরো একটা আছে।
তিনি বললেন, তুমি সেটা তোমাদের খাদিমের জন্য খরচ করো।

লোকটি বললো: আমার নিকট আরো আছে।
তিনি বললেন, সে প্রসঙ্গে তুমি বেশি জানো।

তবে নাসায়ী এবং হাকিমের বর্ণনায়, সন্তানের পূর্বে স্ত্রীর খরচের কথা আছে।
(বুলুগুল মারাম, হাদিস নম্বরঃ [1149], অধ্যায়ঃ পর্ব – ৮ঃ বিবাহ (كتاب النكاح), তাওহীদ পাবলিকেশন)

💠 ইমাম শওকানী বলেন, “এ ব্যাপারে ইজমা বা সর্বসম্মত মত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, স্ত্রীর প্রয়োজনে খরচ করা ওয়াজিব। তারপর সম্পদ অতিরিক্ত থাকলে অন্যান্য নিকটাত্মীয়গণের জন্য।” (নাইলুল আওতার ৬/৩৮১)

💠 আল্লামা উসাইমীন রাহ. বলেন, “সঠিক কথা হল, সর্বপ্রথম নিজের প্রয়োজনে খরচ করবে, তারপর তার স্ত্রী, তারপর সন্তান, তারপর পিতামাতা, তারপর অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন।” (উৎস: ফতহু যিল জালালি ওয়াল ইকরাম ৫/১৯৪)
এ মর্মে বহু আলেমের বক্তব্য রয়েছে। আল্লাহু আলাম।

▬▬▬◄❖►▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।