কাযা রোযার নিয়ত যথা সময়ে আদায়কৃত রোযার মত রাত থেকে পাকাপোক্ত হওয়া আবশ্যক

আমি জানতাম না যে, যে নারী রমযান মাসে হায়েযগ্রস্ত ছিল সে নারীকে নফল রোযা পালন করার আগে দ্রুত কাযা রোযা পালন করতে হয়। এ কারণে আমি রমযানের পরে কিছু নফল রোযা রেখেছি। এখন আমি সে রোযাগুলোর নিয়ত কি পরিবর্তন করতে পারব এবং যে রোযাগুলো রেখে ফেলেছি সেগুলোকে কাযা রোযা হিসেবে ধরতে পারব? দিনের বেলায় কি নিয়ত পরিবর্তন করা যায়? অর্থাৎ আমি যদি নফল রোযা হিসেবে রোযাটি রাখা শুরু করি দিনের বেলায় আমি নিয়ত পরিবর্তন করে কাযা রোযার নিয়ত করতে পারব?

আলহামদুলিল্লাহ।

এক:

যে নফল রোযা পালন করা শেষ হয়ে গেছে সে রোযার নিয়ত পরিবর্তন করে সেটাকে রমযানের ছুটে যাওয়া রোযার কাযা হিসেবে ধরা সঠিক নয়। যেহেতু কাযা রোযার নিয়ত রাত থেকে পাকাপোক্ত হওয়া আবশ্যক। কারণ কাযা আমলের হুকুম সময়মত আদায়কৃত আমলের হুকুমের মত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি ফজরের আগে নিয়ত পাকা করেনি তার রোযা নেই”।[সুনানে তিরমিযি (৭৩০), আলবানী সহিহুত তিরমিযি’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন] হাদিসটি বর্ণনা করার পর তিরমিযি বলেছেন: আলেমদের নিকট এই হাদিসের অর্থ হচ্ছে- যে ব্যক্তি রমযানের রোযার নিয়ত ফজরের আগে করেনি কিংবা রমযানের কাযা রোযার নিয়ত ফজরের আগে করেনি কিংবা মানতের রোযার নিয়ত রাত থেকে করেনি। তবে, নফল রোযার নিয়ত সকালে করাও বৈধ। এটি ইমাম শাফেয়ি, আহমাদ ও ইসহাকের অভিমত।[সমাপ্ত]

ইমাম নববী (রহঃ) বলেন:

রমযানের রোযা, কাযা রোযা, কাফ্‌ফারার রোযা, হজ্জের ফিদিয়ার রোযা ইত্যাদি ওয়াজিব রোযাগুলোর নিয়ত দিনের বেলায় করলে শুদ্ধ হবে না- এতে কোন মতভেদ নেই।[আল-মাজমু (৬/২৮৯) থেকে সমাপ্ত]

[দেখুন: ইবনে কুদামার ‘আল-মুগনী’ (৩/২৬)]

আরেকটি কারণ হল- ইবাদত পালন শেষ হয়ে যাওয়ার পর নিয়তের পরিবর্তন ইবাদতের উপর কোন প্রভাব ফেলবে না।

সুয়ুতি (রহঃ) ‘আল-আশবাহ ওয়ান নাযায়ের’ গ্রন্থে (পৃষ্ঠা-৩৭) বলেন:

“যদি কেউ নামায সমাপ্ত করার পর নামায কর্তন করার নিয়ত করে আলমেদের সর্বসম্মতিক্রমে এতে নামায বাতিল হবে না। অনুরূপ বিধান সকল ইবাদতের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।”[সমাপ্ত]

অতএব, যে রোযাগুলো নফল হিসেবে পালন করা হয়েছে সেগুলো কাযা রোযার দায়িত্ব মুক্ত করবে না।

আরেকটি কারণ হচ্ছে- সে ব্যক্তি তো নফল রোযা হিসেবে আমলটি শুরু করেছে। এরপর দিনের বেলায় ঐ রোযাকে কাযা রোযাতে পরিবর্তন করার ভাবনা উদ্রেক হয়েছে। এর মানে সে ব্যক্তি যে দিনটির সম্পূর্ণ অংশ ওয়াজিব রোযাতে কাটানোর কথা সেই দিনের কিছু অংশ নফল রোযাতে কাটিয়েছে। তাই এ রোযা ফরয রোযার কাযা হিসেবে দায়িত্ব মুক্ত করবে না। কারণ আমল মূল্যায়িত হয় নিয়ত দিয়ে। যেহেতু সে ব্যক্তি দিনের কিয়দংশ নফল রোযা রেখে কাটিয়েছে।

আরেকটি কারণ হচ্ছে- সাধারণ রোযা থেকে নির্দিষ্ট রোযার দিকে নিয়তের পরিবর্তন; এমনটি করা সঠিক নয়।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

আরও জানতে 39689 নং প্রশ্নোত্তরটি দেখুন।

তবে, আমরা এ বিষয়ে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই যে, কারো দায়িত্বে রমযানের কাযা রোযা থাকলেও তার জন্য নফল রোযা রাখা নিষিদ্ধ নয়; যেমনটি প্রশ্নে উল্লেখ করা হয়েছে। বরং অগ্রগণ্য অভিমত হচ্ছে- কারো উপরে রমযানের কাযা রোযা কিংবা অন্য কোন ফরয রোযা থাকা সত্ত্বেও তার নফল রোযা পালন করা সঠিক হবে; যতক্ষণ পর্যন্ত পরবর্তী রমযান আসার আগে তার সামনে কাযা রোযা পালন করার মত সময় থাকে। তবে, রমযানের কাযা রোযা পালন করার আগে শাওয়ালের ছয় রোযা পালন থেকে নিষেধ করা হয়; যদিও বিষয়টি আলেমদের মাঝে মতভেদপূর্ণ।

আরও জানতে দেখুন: 41901 নং ও 39328 নং প্রশ্নোত্তর।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

https://islamqa.info/bn/192428