কানের দুল সংক্রান্ত বোনদের কতিপয় প্রশ্নের উত্তর

প্রশ্ন: মহিলাদের জন্য কানের দুল ও নাকফুল পরার বিধান কি?

উত্তর:
নাকফুল, কানের দুল, চুরি ইত্যাদি অলংকার পরিধান করা আমাদের সমাজে নারীদের সাজসজ্জার অন্তর্ভুক্ত। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও এসব ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে।
ইসলাম নারীদেরকে এগুলো ব্যবহারে বাধা দেয় না। বরং তাদেরকে অঙ্গসজ্জা এবং অলংকার পরিধানের প্রতি উৎসাহিত করে। তবে অলংকার পরে পর পুরুষদের সামনে খোলামেলা চলাফেরা করা কোন অবস্থায় বৈধ নয়। আল্লাহু আলাম।
———————–
প্রশ্ন: ওযু ও ফরয গোসলে মেয়েদের নাকফুল বা কানের দুল নাড়িয়ে ছিদ্রের মধ্যে পানি পৌঁঁছানো জরুরি কি?

উত্তর:
গোসলে মহিলাদের নাকফুল বা কানের দুল খুলে বা তা নাড়িয়ে ছিদ্রের ভিতর পানি পৌঁছনো আবশ্যক নয়।
ওযুতে নাকের বাহ্যিক অংশে পানি পৌঁছানোই যথেষ্ট ইনশাআল্লাহ। তবে হাদীসে নাক ঝাড়া বা নাক পরিস্কার করার প্রতি গুরুত্ব এসেছে। তাই এ ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়া উচিৎ।
আর কান মাসেহ করার সময় কানের দুলের উপর দিয়ে হাত মাসেহ করাই যথেষ্ট।
অনুরূপভাবে গোসল করার সময় কানের দুল খোলা বা নড়ানো জরুরি নয়। কানের উপরে পানি পৌঁছানোই যথেষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহু আলাম।
——————
প্রশ্ন: মনে করুন, বরপক্ষ আমাকে দেখতে এসে হবু শ্বশুর-শাশুড়ি খুশি হয়ে তাদের ইচ্ছায় এক জোড়া কানের দুল আমাকে গিফ্ট করলেন। কিন্তু পরে সে বিয়েটা হয় নি। কোন কারণে ভেঙে গেছে। পরে দুলগুলো ফিরিয়ে দিতে চাইলেও তারা নেয় নি‌।
এখন এগুলো কি এখন আমি স্বাভাবিক ভাবে ব্যবহার করতে পারবো? এ বিষয়ে ইসলাম কী বলে? এ মূহুর্তে আমার করণীয় কি?

উত্তর:
তারা যেহেতু কানের দুলগুলো উপহার হিসেবে দিয়েছে সেহেতু আপনি তা স্বাচ্ছন্দে ব্যবহার করতে পারেন। এতে কোনো আপত্তি নেই ইনশাআল্লাহ।
———————
কুড়িয়ে পাওয়া স্বর্ণে দুলের ক্ষেত্রে করণীয়:

প্রশ্ন: আমার এক আত্মীয় এক জোড়া স্বর্ণের কানের দুল রাস্তায় পড়ে থাকা অবস্থায় দেখে তিনি সেটা তুলে বাড়িতে নিয়ে এসেছেন। এখন সেই অলংকার ব্যবহার করা কি তার জন্য জায়েয হবে?
উত্তর:
এ ক্ষেত্রে রাসুল সা. এর নিম্নোক্ত দুটি হাদীস পড়ুন:
 রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন কোনো কুড়িয়ে পাওয়া বস্তু কুড়িয়ে নেয় সে যেন তার ওপর দুজন ন্যায়পরায়ণ সাক্ষী রাখে, তারপর সে যেন তা গোপন না করে, পরিবর্তন-পরিবর্ধন না করে, তারপর যদি তার মালিক আসে, তবে সে সেটার অধিকারী, আর যদি না আসে, তবে সেটা আল্লাহর সম্পদ, তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন।’ (ইবনে হিব্বান : ৪৮৯৪)।
 যাইদ ইবনু খালিদ আল-জুহানী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, কোন হারানো জিনিস প্রাপ্তি প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বললেনঃ
عَرِّفْهَا سَنَةً فَإِنِ اعْتُرِفَتْ فَأَدِّهَا وَإِلاَّ فَاعْرِفْ وِعَاءَهَا وَعِفَاصَهَا وَوِكَاءَهَا وَعَدَدَهَا ثُمَّ كُلْهَا فَإِذَا جَاءَ صَاحِبُهَا فَأَدِّهَا
“এক বছর না হওয়া পর্যন্ত এর ঘোষণা দিতে থাক। যদি সনাক্তকারী কোন লোক পাওয়া যায় তাহলে তাকে তা ফিরত দাও। এর ব্যতিক্রম হলে তুমি এর থলে ও থলের বন্ধনী সঠিকভাবে চিনে রাখ এবং এর মধ্যকার জিনিস গণনা করার পর কাজে ব্যবহার কর। তারপর মালিক এসে গেলে এটা তাকে ফিরিয়ে দিও।” (সহীহ, ইবনু মাজাহ (২৫০৭), নাসাঈ)
মোটকথা স্বর্ণালঙ্কার বা মূল্যবান বস্তু, টাকা-পয়সা ইত্যাদি জিনিস কুড়িয়ে পেলে উপরোক্ত বিধিবিধানগুলো মেনে চলা আবশ্যক। আল্লাহ তাওফিক দানকারী। আল্লাহু আলাম।
——————
প্রশ্ন: মেয়েরা সাধারণত: স্বর্ণ, রৌপ্য ছাড়াও বিভিন্ন মেটালের গহনা পরে থাকে । এসব গহনা (দুল, চুড়ি, আংটি ইত্যাদি) পরে সলাত আদায় করলে তা কি বিশুদ্ধ হবে?

উত্তর:
মহিলাদের জন্য যেহেতু স্বর্ণ, রৌপ্য বা অন্যান্য সব ধরণের ধাতু থেকে তৈরিকৃত অলংকার ব্যবহার করা বৈধ সেহেতু সেগুলো পরা অবস্থায় সালাত আদায়ে কোন আপত্তি নাই ইনশাআল্লাহ।
———————
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী
দাঈ জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব