ইসলামের দৃষ্টিতে জন্মনিয়ন্ত্রন

🔹 শাইখ ইবনে উছাইমীন (রহঃ) বলেন, নারী যদি এত বেশি সন্তান প্রসব করে যে, তার ফলে শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় অথবা সে গৃহস্থালির আবশ্যক কাজ-কর্ম সমূহ সুচারুরূপে আঞ্জাম দিতে সক্ষম হয় না। আর সে এই গর্ভ সঞ্চারের বিষয়টি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে সীমাবদ্ধ করতে চায়, যেমন প্রতি দু’বছর পর একবার গর্ভধারণ, তবে স্বামীর অনুমতিক্রমে সে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটা সাহাবায়ে কেরামের যুগে ‘আযল’ করার অনুরূপ। তারা ‘আযল’ করতেন কিন্তু সে সম্পর্কে আল্লাহ বা তাঁর রাসূল কোন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন নি।
🔹 শাইখ বিন বায (রহঃ) বলেন, যদি বিশেষ প্রয়োজন দেখা যায় তবে সাময়িকভাবে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যেমন নারী জরায়ুতে কোন রোগে আক্রান্ত হয়েছে, অথবা অন্য কোন রোগে আক্রান্ত আছে, যার ফলে গর্ভবতী হলে সমস্যায় পড়ে যাবে। তখন প্রয়োজন অনুযায়ী সাময়িকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
অনুরূপভাবে নারী যদি অনেক সন্তানের মা হয়, এত বেশী সন্তান যে আবার গর্ভ ধারণ করা তার জন্যে ভীষণ কষ্টকর, তবে এ সকল অবস্থায় নিদিষ্ট একটি সময় পর্যন্ত যেমন একবছর বা দু’বছরের জন্যে গর্ভ ধারণে বিরতি নিতে পারে। যাতে সমস্যাগুলো হালকা হয়, যাতে শিশুদের যথাযথভাবে লালন-পালন করতে পারে।
অনুরূপভাবে কোন রোগের কারণে নির্ভরযোগ্য আমানতদার মুসলিম ডাক্তার যদি পরামর্শ দেয়, গর্ভ ধারণ এই নারীর জন্যে ক্ষতির কারণ, তবে তখনও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
উত্তর দিয়েছেন: শাইখ আবদুল্লাহ আল কাফী বিন আব্দুল জলীল
————————————

জন্মনিয়ন্ত্রণ কখন বৈধ এবং কখন বৈধ নয়? জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিগুলো কি কি?
➖➖➖➖➖➖➖➖
উত্তর:
এ ব্যাপার সংক্ষিপ্ত কথা হল ,
🔶 খাদ্যাভাবের আশংকা বা দারিদ্রতার ভয়ে জন্ম নিয়ন্ত্রন করা সর্বস্মমতভাবে হারাম। আল্লাহ তা’আলা বলেন: وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُمْ خَشْيَةَ إِمْلَاقٍ ۖ نَحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَإِيَّاكُمْ ۚ إِنَّ قَتْلَهُمْ كَانَ خِطْئًا كَبِيرًا
“দারিদ্রের ভয়ে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না। তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই জীবনোপকরণ দিয়ে থাকি। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মারাত্নক অপরাধ।”
-Sura Al-Isra’, Ayah 31
🔶 শারীরিক অক্ষমতা, প্রাণনাশের সম্ভাবনা বা মারাত্মক দূর্বলতার কারণে অভিজ্ঞ ডাক্তার যদি সন্তান গ্রহন থেকে বিরত থাকতে বলেন তবে সর্বসম্মতভাবে তা জায়েয।

🔶 তবে দাম্পত্য জীবনকে গুছিয়ে নেয়া বা দাম্পত্য জীবনকে উপভোগ্য করা বা বিশেষ প্রয়োজনে কেউ যদি সাময়িকভাবে জন্ম নিয়ন্ত্রন করেন তবে সঠিক কথা হল, তা জায়েয। তবে স্থায়ীভাবে করা বৈধ নয়। সাহাবীদের আজল করার পদ্ধতি প্রচলিত ছিল। তখন ওহি নাজিল হলেও তা নিষিদ্ধ করা হয়নি।
যেমন হাদীসে এসেছে, জাবির রা. বলেন:
كُنَّا نَعْزِلُ وَالْقُرْآنُ يَنْزِلُ
“আমরা ‘আযল করতাম। সে সময় কুরআন অবতীর্ণ হিচ্ছল।” [৫২০৭](আধুনিক প্রকাশনী- ৪৮২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮২৯)

সুতরাং আযল পদ্ধতি, কন্ডম ব্যবহার, ইনজেকশন, পিল ইত্যাদি ব্যবহার করে সাময়িকভাবে গর্ভনিরোধ করা জায়েয ইনশাআল্লাহ। আল্লাহু আলাম।
—————————
উত্তর দিয়েছেন: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।