ইসলামী রাজনীতি, ইসলামী দল ও নেতা নির্বাচন

প্রশ্ন: ক. ইসলামী রাজনৈতিক দল করা যাবে কি?
খ. বাংলাদেশের ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো কি সঠিক পথের উপর পরিচালিত হচ্ছে?
গ. নেতা নির্বাচনে কী কী গুণাবলী দেখা দেখা উচিৎ?

উত্তর:
 ক. ইসলামী রাজনৈতিক দল:
যদি কোন ব্যক্তি বা সংগঠন তাওহীদ, সুন্নাহ ও বিশুদ্ধ আকীদা ভিত্তিক রাষ্ট্র পরিচালনা করার উদ্দেশ্যে এবং শিরক, বিদআত, অপসংস্কৃতি ও জুলুম-নিপীড়ন মুক্ত উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গঠনের উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক দল গঠন করে তাহলে তাদের সাথে যুক্ত হওয়া যাবে।

পক্ষান্তরে মানব রচিত মতবাদ প্রতিষ্ঠা অথবা শিরক-বিদআতের সাথে আপোষ কামিতা ও সূফীবাদ প্রতিষ্ঠায় নিযুক্ত তথাকথিত ইসলামী রাজনৈতিক দলের সাথে কোন ঈমানদার ব্যক্তির যুক্ত হওয়া বৈধ নয়।

 বাংলাদেশের ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো কি সঠিক পথের উপর পরিচালিত হচ্ছে?

উত্তর:
আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে, যে সকল সংগঠন, জামাআত বা দল তাওহীদ ও সুন্নাহর প্রতিষ্ঠা এবং শিরক-বিদআত, কুসংস্কার ইত্যাদি সমাজ থেকে দূর করার মানসে সর্বাধিক গুরুত্বের সাথে কাজ করে না বা এ বিষয়গুলো তাদের মূল কার্যক্রম নয় তারা কোনভাবেই সঠিক পথের উপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না।
কেননা, আকীদা-বিশ্বাস ও তাওহীদের ভিত্তিমূল বিশুদ্ধ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দ্বীনের দাওয়াত, মেহনত, শ্রম, সাধনা এবং ইবাদত-বন্দেগী যা কিছু করা হোক না কেন আল্লাহর দরবারে সেগুলো গৃহীত হবে না।
আল্লাহ তাআলা বলেন”
وَقَدِمْنَا إِلَىٰ مَا عَمِلُوا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءً مَّنثُورًا
আমি তাদের কৃতকর্মের প্রতি মনোনিবেশ করব, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধুলিকণায় পরিণত করে দিব।” (সূরা ফুরকান: ২৩)
অর্থাৎ মানুষ দুনিয়ার জীবনে যে সব কাজকে ভালো ও নেকির কাজ মনে করে করতো সেগুলোর মধ্যে শিরক ও বিদআত থাকার কারণে কিয়ামতের দিন সেগুলো সব অনর্থক হয়ে যাবে। এগুলো তাদের কোন কাজে আসবে না। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন।

যুগে যুগে সকল নবী-রাসূলের দাওয়াতের মূল মিশন ছিল, মানুষের নিকট তাওহীদের দাওয়াত পৌঁছিয়ে দেয়া এবং তাদের অন্তর থেকে শিরকী ধ্যান-ধারণা, চিন্তা ও বিশ্বাসকে দূর করা। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّـهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ
“আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর এবং তাগুত থেকে বেঁচে থাক।” (সূরা আন নহল: ৩৬)
অর্থাৎ যুগে যুগে নবী-রাসূলদের আবির্ভাব ঘটেছে, ইবাদত তথা তাওহীদের আহ্বান এবং তাগুত তথা শিরক থেকে মানুষকে সর্তক করার উদ্দেশ্যে।
আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নবুওয়তী যিন্দেগি থেকে এই কর্মনীতিই প্রতীয়মান হয়। তিনি দাওয়াতের সূচনা করেছেন ‘লাইলাহা ইল্লালাহ’ তথা তাওহীদ এর মাধ্যমে এবং এই তাওহীদী চেতনা ও বিশ্বাসকে মানুষের হৃদয়ে বদ্ধমূল করা পর্যন্ত তিনি জিহাদ এবং রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে মনোনিবেশ করেন নি।

কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, আমাদের দেশে প্রচলিত ইসলামী সংগঠন ও দলগুলোর কর্মসূচীতে সব কিছুই আছে কিন্তু সেখানে তাওহীদ-সুন্নাহর চর্চা ও প্রতিষ্ঠা এবং গণ মানুষের আকীদা-আমল সংশোধনের কার্যক্রম নিতান্ত গৌণ এবং শিরক, বিদআত, কুসংস্কার মূলোৎপাটনের মৌলিক বিষয়গুলো প্রায় অনুপস্থিত।
সুতরাং এখান থেকে আমরা বলব, বাংলাদেশে প্রচলিত ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো তাদের উপর অর্পিত মৌলিক দায়িত্ব পালন বাদ দিয়ে শাখা-প্রশাখা নিয়ে এবং প্রাসাদ তৈরির জন্য মূল ফাউন্ডেশনকে সুদৃঢ় না করে পেইন্টিং ও ডেকোরেশন নিয়ে ব্যতিব্যস্ত। আল্লাহুল মুস্তাআন।

 খ. আদর্শ নেতার কতিপয় গুণাবলী:

১. কুরআন-সুন্নাহর অনুসারী।
২. কুরআন-সুন্নাহর ইলম ও আমলে সুসজ্জিত।
৩. তাকওয়া ও চরিত্রবান।
৪. পরোপকারী।
৫. নেতৃত্বের গুণাবলী সমৃদ্ধ।
৬. নেতৃত্বের লোভ মুক্ত…ইত্যাদি।
●●●●●✪✪✪●●●●●
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব