ইমামের মত মুক্তাদিও কি ‘সামি’আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ পাঠ করবে না কি কেবল ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ পাঠ করাই যথেষ্ট?

প্রশ্ন: ইমামের সাথে যখন জামাতে সালাত আদায় করা হয় তখন কি মুক্তাদি ইমামের সাথে সামি’আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলবে নাকি ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলার দরকার নেই; শুধু ‘রব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’ বললেই যথেষ্ট হবে?

উত্তর:
জামাআতের সাথে সালাত আদায়ের সময় মুক্তাদিও ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ না কি কেবল রাব্বালা লাকাল হামদ বলবে.. এ বিষয়ে বিজ্ঞ আলেমদের মাঝে দ্বিমত রয়েছে। জুমহুর বা অধিকাংশ আলেমদের মতে মুক্তাদি কেবল ‘রাব্বানা লাকাল হামদ…’ বলবে। কেননা, এ মর্মে একাধিক সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
🔰 তন্মধ্যে একটি হাদীস হল:
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَقُولُ ‏ “‏ إِذَا قَالَ الإِمَامُ سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ ‏.‏ فَقُولُوا اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ ‏
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেনঃ ইমাম যখন “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ” বলে তখন তোমরা বলবে, “আল্লাহুম্মা রববানা ওয়া লাকাল হামদ।” (সহীহ মুসলিম)

🔰 আরেকটি হাদীস:
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়ায় সওয়ার হন এবং ঘোড়ার পিঠ থেকে নিচে পড়ে গিয়ে তিনি ডান পাঁজরে ব্যথা পান। ফলশ্রুতিতে তিনি কোন এক ওয়াক্তের সলাত বসে আদায় করেন। আমরাও তাঁর পেছনে বসে সলাত আদায় করলাম। সলাত শেষে তিনি বললেনঃ ইমাম এজন্যই নিয়োগ করা হয়, যেন তার অনুসরণ করা হয়। ইমাম দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করলে তোমরাও তখন দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করবে। ইমাম রুকু‘ করলে তখন তোমরাও রুকু‘ করবে। ইমাম মাথা উঠালে তোমরাও তখন মাথা উঠাবে। আর ইমাম ‘‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’’ বললে তোমরা বলবে, ‘‘রব্বানা লাকাল হামদ’’। আর ইমাম বসে সলাত আদায় করলে তোমরা সকলেই বসে সলাত আদায় করবে।
[বুখারী (অধ্যায়ঃ সালাত, ছাদে সালাত আদায়, হাঃ ৩৭৮, মুসলিম, অধ্যায়ঃ সালাত, সুফিয়ান সূত্রে যুহরী থেকে।]

🔰 আরেকটি হাদীস:
عَنْ رِفَاعَةَ بْنِ رَافِعٍ الزُّرَقِيِّ، قَالَ كُنَّا يَوْمًا نُصَلِّي وَرَاءَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَلَمَّا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرَّكْعَةِ قَالَ ‏”‏ سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ ‏”‏‏.‏ قَالَ رَجُلٌ وَرَاءَهُ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ، حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ، فَلَمَّا انْصَرَفَ قَالَ ‏”‏ مَنِ الْمُتَكَلِّمُ ‏”‏‏.‏ قَالَ أَنَا‏.‏ قَالَ ‏”‏ رَأَيْتُ بِضْعَةً وَثَلاَثِينَ مَلَكًا يَبْتَدِرُونَهَا، أَيُّهُمْ يَكْتُبُهَا أَوَّلُ
আবদুল্লাহ্ ইবনু মাসলামা (রহঃ) … রিফা’আ ইবনু রাফি’ যুরাকী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। তিনি যখন রুকূ’ থেকে মাথা উঠিয়ে سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বললেন, তখন পিছন থেকে এক সাহাবী رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ، حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ বললেন। সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কে এরূপ বলেছিল? সে সাহাবী বললেন, আমি। তখন তিনি বললেনঃ আমি দেখলাম ত্রিশ জনের বেশী ফিরিশতা এর সাওয়াব কে আগে লিখবেন তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করছেন।
(সহীহ বুখারী, হাদিস নম্বরঃ [763] অধ্যায়ঃ ১০/ আযান (كتاب الأذان) ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

উপরোক্ত হাদীসগুলো থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, মুক্তাদি কেবল ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ বা আল্লাহুম্মা রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলবে। কেননা উপরোক্ত হাদীসগুলোতে রাসুলুল্লাহ সা. ইমাম এবং মুক্তাদির জন্য আলাদা আলাদা বাক্য বলার নির্দেশনা দিয়েছেন।
সাহাবীদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর, আবু হুরায়রা রা. এর এই মত পোষণ করেছেন। ইমাম শাবী, ইমাম মালেক, ইমাম আবু হানিফা রহ. প্রমূখওএ মত ব্যক্ত করেছেন এবং দলীলের আলোকে এটাই অধিক শক্তিশালী মত ইনশাআল্লাহ। আধুনিক যুগে আল্লামা উসাইমীন রহ. প্রমূখও এই মতকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।

পক্ষান্তরে কতিপয় আলিম, ইমাম-মুক্তাদি উভয়কে ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ এবং ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ পড়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।
এ ক্ষেত্রে তারা যে সকল দলীল দেন সেগুলোর মধ্যে একটি হল, রাসূল সা. বলেন:
ﺻَﻠُّﻮْﺍ ْﻛَﻤَﺎ ﺭَﺃَﻳْﺘُﻤُﻮْﻧِﻲ ﺃُﺻَﻠِّﻲْ “তোমরা ঠিক সেভাবে সালাত আদায় কর , যেভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে দেখছো।” (সহীহুল বুখারী: ৬৩১, ৬০০৮, ৭২৪৬)
এবং যে সকল হাদীসে ‘সামিআল্লাহু লিমান হামীদাহ’ বলার হাদীসে এসেছে সে সকল আম/সাধারণ হাদীস উল্লেখ করেছেন।
এ পক্ষে মত ব্যক্ত করেছেন, ইবনে সীরীন, আবু বুরদা, ইমাম শাফেয়ী, আত্বা প্রমূখ। আত্বা রহ. বলেন, “(ইমাম-মুক্তাদি উভয়েই) উভয় দুআ (সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ এবং রাব্বানা লাকাল হামদ) পাঠ করবে। এটাই আমার নিকট অধিক পছন্দনীয়।”
আধুনিক যুগের শাইখ আলবানী এ মতকেই প্রধান্য প্রদান করেছেন।

মোটকথা, বিষয়টি দ্বিমতপূর্ণ হলেও ১ম মতটি দলীলের আলোকে অধিক শক্তিশালী বলে বিবেচিত হয়। সুতরাং মুক্তাদি যদি রাব্বালাকাল হামদ…পাঠ করে তাহলে তাই যথেষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ। কিন্তু কেউ যদি ২য় মতটিকে গ্রহণ করে তাতেও আপত্তি নেই ইনশাআল্লাহ।

উল্লেখ্য যে, রাব্বানা লাকাল হামদটি চারভাবে বলা সহীহ হাদীস দ্বারা সুপ্রমাণিত। যথা:
ক. রাব্বানা লাকাল হামদ।
খ. আল্লাহুম্মা রাব্বানা লাকাল হামদ।
গ. রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ
ঘ. আল্লাহুম্মা রাব্বা ওয়া লাকাল হামদ
আল্লাহু আলাম।

🖌🖌🖌🖌🖌
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।।